
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মুক্তিযুদ্ধ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। সে সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনায় নিযুক্ত ছিলেন। জন্মভূমির স্বাধীনতার সংগ্রামে সমর্থন যোগাতে, তিনি প্রবাসী বাঙালিদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের প্রচারণা চালান। পাশাপাশি তিনি মার্কিন প্রশাসন, জাতিসংঘ, এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
ড. ইউনূস স্থানীয় টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজও করেছেন। তিনি “বাংলাদেশ নিউজলেটার” নামে একটি প্রকাশনা শুরু করেন, যা তাঁর ন্যাশভিলের বাড়ি থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হত। এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে তহবিল গঠনের জন্য প্রবাসী বাঙালিদের নিয়ে বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা
নিজের বই “গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন”-এ তিনি উল্লেখ করেছেন, কীভাবে ২৬ মার্চ ন্যাশভিলে প্রবাসী বাঙালিদের নিয়ে এক বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন ঘোষিত হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়:
১. স্থানীয় সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারণা চালানো।
২. একটি তহবিল গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের প্রচারণার খরচ মেটানো।
৩. বেতন থেকে নির্দিষ্ট অংশ তহবিলে দান করা।
পরবর্তীতে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন প্রশাসন ও বিভিন্ন দূতাবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। ক্যাপিটাল হিলে বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন।
স্বাধীনতার পর দেশে ফেরা ও নতুন উদ্যোগ
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর ড. ইউনূস দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। যুদ্ধের পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য তিনি সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য “গ্রামীণ ব্যাংক” প্রতিষ্ঠা করেন, যা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে।
সমাজসেবার দৃষ্টিভঙ্গি
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও পরবর্তী সমাজসেবার দৃষ্টিভঙ্গি একটি সুসংহত লক্ষ্যের বহিঃপ্রকাশ। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনতার পর গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন, দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবকল্যাণের জন্য কাজ করাই তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র।