

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ: এখন কি গণমাধ্যমে লেখা বা মত প্রকাশ করাও অপরাধ?
বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তাল সময়ের মাঝে অন্তর্বর্তী সরকারের এক ঘোষণায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই ঘোষণার পর থেকেই নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে—এই নিষিদ্ধ দলের ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করা বা খবর প্রকাশ করাও কি আইনের আওতায় অপরাধ গণ্য হবে?
সোমবার (১২ মে) জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দলটির বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর সকল ধরণের প্রচার, সভা-সমাবেশ, মিছিল এবং প্রচারমূলক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকবে।
সরকারের বক্তব্য: মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব হয়নি?
প্রজ্ঞাপন জারির পরেই সরকার দাবি করে, এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর ওপর কার্যকর। অন্য রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবেন। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখানে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন জানিয়েছেন, “আইনটি যথেষ্ট অস্পষ্ট। কেউ যদি নিরপেক্ষ বিশ্লেষণও করেন, সেটি যদি সরকার বিরোধিতা মনে করে, তাহলেও সেটা শাস্তিযোগ্য হতে পারে।”
কি বলা আছে আইনে?
সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এবং ২০২৫ সালের সংশোধনী অনুযায়ী, কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের পক্ষে বা সমর্থনে কোনো প্রচারণা, বক্তব্য বা সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না। এমনকি অতীতের ইতিহাস নিয়েও কোনো ইতিবাচক প্রচারণা করলে সেটাও আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
পেছনের প্রেক্ষাপট
শিক্ষার্থীদের একটি নতুন দল এনসিপি সহ বেশ কয়েকটি সংগঠন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামে। এরপর সরকার জরুরি বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত নেয় দলটিকে নিষিদ্ধ করার।
প্রজ্ঞাপনে দাবি করা হয়, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে আওয়ামী লীগ মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, গুম, পুড়িয়ে হত্যা ইত্যাদি সংঘটিত করেছে, যা আন্তর্জাতিক রিপোর্টেও উঠে এসেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলমান রয়েছে।
মতপ্রকাশ কতটা নিরাপদ?
আদালতে বিচার চললেও সংবাদমাধ্যম বা ব্যক্তি কী বলবে—তা নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “সমর্থনের মতো দেখালেই শাস্তি হতে পারে।”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, “আপনি সমর্থনমূলক কিছু বললে সেটা নিষিদ্ধ ঘোষিত সত্তার পক্ষে বিবেচিত হতে পারে।” ফলে কেউ নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকেও কিছু বললে তা অপরাধে পরিণত হতে পারে।
আইনের শাস্তির পরিধি
এই আইনের অধীনে কেউ যদি নিষিদ্ধ সংগঠনের পক্ষে প্রচারণা চালান, তবে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল এবং আর্থিক জরিমানা হতে পারে।
আইনের অপব্যবহারের শঙ্কা
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, আইনটি যেমন অস্পষ্ট, তেমনই এর অপব্যবহারও সহজ। “আওয়ামী লীগের আমলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হয়েছিল,” বলেন সারা হোসেন।
উপসংহার
সরকার বলছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রয়েছে, তবে বাস্তবে তার ব্যতিক্রম ঘটার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তাই সাংবাদিক, বিশ্লেষক ও সাধারণ নাগরিকদের এই বিষয়ে আরও সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।