খুলনার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে সাবেক এসআই মো. শাহ আলমের বিরুদ্ধে ঘুষ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে সাজা
খুলনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় পুলিশের এক সাবেক উপপরিদর্শককে (এসআই) দুটি ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাঁকে সাত হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে তাঁকে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম এই রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এসআই মো. শাহ আলম সর্বশেষ খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) খালিশপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। ২০১৬ সালে দুদক তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলের পর তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
খুলনার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. ইয়াসিন আলী জানিয়েছেন, ঘুষ নেওয়ার দায়ে শাহ আলমকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড। পাশাপাশি ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে চার বছরের কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। আদালতের রায় অনুযায়ী, এক সাজা শেষ হওয়ার পর অন্যটি কার্যকর হবে।
রায় ঘোষণার সময় শাহ আলম আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং রায়ের পর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা থেকে ৯ বছর বয়সী এক শিশুকে বাসার গৃহকর্মী হিসেবে নিয়ে আসেন মিল্কি আইসক্রিম ফ্যাক্টরির মালিক মাসুদ হাসান ও তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন। দীর্ঘদিন কাজ করার পর ওই শিশু নিখোঁজ হয়ে যায়।
২০১২ সালের ৭ মে শিশুটির মা খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মাসুদ হাসান, মোহাম্মদ আলী খোন্দকার ও মাসুদ শেখের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন খালিশপুর থানার তৎকালীন এসআই মো. শাহ আলম।
তদন্ত চলাকালে শাহ আলম মামলার আসামিদের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ না পেয়ে তিনি মামলার তদন্তে অনিয়ম করেন। তদন্তে তিনি এক অজ্ঞাতপরিচয় নারীর লাশকে নিখোঁজ শিশুর লাশ হিসেবে উল্লেখ করে ‘হত্যাকাণ্ড’ সাজানোর চেষ্টা করেন। এরপর মাসুদ হাসান ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাঁদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। তবে পরবর্তীতে পুলিশ প্রকৃত নিখোঁজ শিশুটিকে অন্য একটি স্থানে জীবিত উদ্ধার করে।
২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের খুলনা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন এসআই শাহ আলমের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলায় মোট ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন। সকল তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে আদালত এই রায় ঘোষণা করেন।