
লালমনিরহাটে গৃহবধূর আত্মহত্যা: এআই প্রযুক্তিতে তৈরি আপত্তিকর ভিডিওর অভিযোগ
জাপানপ্রবাসী স্বামীর স্বজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ, পরিবার বলছে মানসিক যন্ত্রণায় মৃত্যু
প্রতিনিধি, লালমনিরহাট:
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় এক গৃহবধূর (বয়স ২০) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটে গত রবিবার। নিহত গৃহবধূর পরিবার দাবি করছে, পারিবারিক বিরোধের জেরে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বামীর এক আত্মীয় তাঁর আপত্তিকর ভিডিও তৈরি ও ছড়িয়ে দেয়। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ওই গৃহবধূ আত্মহত্যা করেন।
জানা যায়, নিহত গৃহবধূর স্বামী (বয়স ২৮) জাপানপ্রবাসী। ১০ মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয় এবং শিগগিরই গৃহবধূরও জাপান যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা।
পুলিশ জানায়, নিহতের শোবার ঘর থেকে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়, যেখানে গৃহবধূ পর্তুগালপ্রবাসী এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। ওই আত্মীয়ই এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিডিও বানিয়ে সেটি ছড়িয়ে দেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
নিহতের ভাই জানান, তাঁর বোন বলেছিলেন, ভিডিওটি বানানো ও ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি স্বামীর স্বজন করেছেন। তাঁরা বোনকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেও মানসিক যন্ত্রণা থেকে তিনি বের হতে পারেননি। অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
পরিবার আরও জানায়, জাপানপ্রবাসী স্বামীর সঙ্গে গৃহবধূর বিয়ে মেনে নিতে পারেননি সেই আত্মীয়। বিষয়টি ধীরে ধীরে পারিবারিক বিরোধে রূপ নেয়। একপর্যায়ে একটি ভুয়া সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে আপত্তিকর ভিডিও পাঠানো হয় বিভিন্ন স্বজনের কাছে।
এ বিষয়ে জাপানপ্রবাসী স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার জন্য তাঁর পর্তুগালপ্রবাসী আত্মীয়কেই দায়ী করেন এবং স্ত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার বিচার দাবি করেন।
অন্যদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তি দাবি করেন, জাপানপ্রবাসী স্বামীর সঙ্গে অন্য একটি মেয়ের সম্পর্ক ছিল, এবং এই বিয়েটি তাঁরা পারিবারিক চাপে করেছিলেন। দেনমোহরের ১০ লাখ টাকা না দিতে গৃহবধূর স্বামী নাটক করছেন বলেও তিনি অভিযোগ তোলেন। তিনি আরও জানান, তাঁর সামাজিক মাধ্যমে একটি ৭ মিনিট ৪ সেকেন্ডের ভিডিও আসে, যা তিনি নিজ স্ত্রীর সঙ্গে শেয়ার করেন।
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী আকবর জানান, সোমবার লাশের ময়নাতদন্ত লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন হয় এবং পরে তা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরিবারকে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নিহতের ভাই জানান, তাঁরা আত্মহত্যার প্ররোচনা ও ভিডিও বানানোর ঘটনায় আইসিটি আইনসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা করবেন। প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রমাণ তাঁদের হাতে রয়েছে।