
নাঙ্গলকোটে গুলিতে পা হারানোর ১০ বছর পর ৭ পুলিশসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
১০ বছর আগের ঘটনায় ন্যায়বিচারের দাবিতে আদালতে মামলা, অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক ওসি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও আছেন।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ১০ বছর আগে এক মুয়াজ্জিনের পায়ে গুলি করে পঙ্গু করার অভিযোগে ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ভুক্তভোগী বেলাল হোসেন মজুমদার এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে আছেন নাঙ্গলকোট থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলামসহ সাত পুলিশ সদস্য এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
ঘটনার বিবরণ
মামলার বাদী বেলাল হোসেন মজুমদার (৫০) কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার দৌলখাঁড় ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি একসময় স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন এবং বর্তমানে স্থানীয় ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী বদিউল আলম জানান, আদালত অভিযোগ গ্রহণ করেছেন, তবে এখনো কোনো আদেশ দেননি। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ওসি নজরুল ইসলামের নির্দেশে এসআই বাবুল আলী, এসআই সালাউদ্দিন আহমেদসহ ছয় পুলিশ সদস্য বেলাল হোসেনের বাড়িতে প্রবেশ করেন। পরে বেলাল ও তার অনুসারী বেলায়েত হোসেনকে থানায় নিয়ে আটক করা হয়।
এরপর গভীর রাতে দুজনকে ঢাকা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লুধুয়া এলাকায় নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে, ওসি নজরুল ইসলামের নির্দেশে এসআই বাবুল আলী এবং এসআই সালাউদ্দিন আহমেদ বেলাল ও বেলায়েতের পায়ে গুলি করেন।
পঙ্গুত্ব এবং বিচারপ্রক্রিয়া
গুলির পর স্থানীয় জনগণ এগিয়ে এলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং আহত দুজনকে পুলিশ ভ্যানে করে প্রথমে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পরে চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার সুপারিশ করলেও পুলিশ হেফাজতে থাকায় তাঁদের ঢাকা নেওয়া হয়নি। ফলে, ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলাল হোসেনের বাম পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা, ফলে তিনি স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যান। অপর ভুক্তভোগী বেলায়েত হোসেনও গুরুতর আহত অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
মামলার আসামির তালিকা
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে তৎকালীন ওসি নজরুল ইসলামকে। এছাড়া, এসআই বাবুল আলী, এসআই সালাউদ্দিন আহমেদ, কনস্টেবল সামছুল হুদা, শাহ আলম, মোক্তার হোসেন ও আবদুস সাত্তারকেও আসামি করা হয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সামছুদ্দিন, পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল মালেকসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের আসামি করা হয়েছে।
বিচারের দাবি
বেলাল হোসেন বলেন, ‘১০ বছর ধরে আমি ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় ছিলাম। আমার জীবনের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন আমি আদালতের কাছে সুবিচার চাই।’ তিনি আশাবাদী যে, আদালত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন।
শেষ কথা
এই মামলাটি একটি আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশি নির্যাতন এবং রাজনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে এমন মামলা বিচারব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। আদালত কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা নিয়ে সবার দৃষ্টি এখন কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দিকে।