এক বছরের শিশুর কামড়ে মৃত্যু হলো বিষাক্ত কোবরা সাপের! চমকে গেলো বিহারের গ্রামবাসী
বিহার:
বৃষ্টির মৌসুমে সাপের কামড় সাধারণ ঘটনা হলেও বিহারে এবার ঘটেছে চমকপ্রদ এক বিপরীত কাহিনি। পশ্চিম চম্পারন জেলার মোহচ্ছি বনকাটোয়া গ্রামে এক বছর বয়সী একটি শিশু নিজেই কামড়ে মেরে ফেলেছে একটি বিষাক্ত কোবরা সাপকে!
শিশুটির নাম গোবিন্দ। ঘটনার দিন, তার মা ঘরের পেছনে কাঠ গুছাচ্ছিলেন। তখনই শিশুটি খেলার ছলে কাছে চলে আসে একটি কোবরা সাপ। মুহূর্তের মধ্যে শিশুটি সাপটিকে ধরে তার মুখে কামড় বসিয়ে দেয়। এতে সাপটি ছটফট করে ও শেষ পর্যন্ত মারা যায়।
গোবিন্দের দাদি মতিসারী দেবী বলেন, “আমরা তখন বুঝতেই পারিনি যে ওটা কোবরা সাপ ছিল। পরে দেখি মুখ ফুলে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে ওকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাই, তারপর বেতিয়া হাসপাতালে ভর্তি করি। চিকিৎসার পর এখন সে পুরোপুরি সুস্থ।”
শিশু চিকিৎসক ডা. কুমার সৌরভ জানান, “শিশুটির মুখে ফোলা ছিল এবং সাপের বিষ মুখের মাধ্যমে শরীরে ঢুকলেও হজমতন্ত্রে গিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। কোবরা বিষ আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে, কিন্তু মুখ দিয়ে গেলে শরীর তা নষ্ট করে দেয়।”
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি শিশুর মুখ বা খাদ্যনালিতে কোনো ক্ষত থাকে, তাহলে বিষ রক্তে মিশে গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে।”
এই ঘটনার চেয়েও অবাক করা বিষয়:
ডা. সৌরভ আরও জানান, “একই দিনে আমি দুটি শিশুর চিকিৎসা করেছিলাম। একজনকে কোবরা কামড়েছিল, আর একজন কোবরাকে কামড়েছিল!” দুই শিশু-ই এখন সুস্থ।
স্থানীয় সাংবাদিক নেয়াজ জানান, “এমন ঘটনা এই এলাকায় আগে কখনো ঘটেনি। শ্রাবণ মাসে সাপ বের হওয়া স্বাভাবিক হলেও এই ঘটনা পুরো গ্রামে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১.৩ লাখ মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। একমাত্র ভারতেই প্রতি বছর প্রায় ৫৮ হাজার মৃত্যু হয়।
২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে শুধু বিহারেই সাপের কামড়ে মারা গেছেন ৯৩৪ জন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ।
কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, অনেক রোগী হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মারা যাওয়ায় মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা কম দেখানো হয়। ভারতের সবচেয়ে বেশি সাপ কামড় সংক্রান্ত মৃত্যু হয় বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও রাজস্থানে।
এক বছরের শিশু গোবিন্দের এই সাহসিকতা ও সৌভাগ্য অনেককেই অবাক করেছে। একই সঙ্গে এটি সর্পদংশন সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন করেছে। চিকিৎসকদের মতে, এমন ঘটনায় পেশাদার চিকিৎসা দ্রুত পাওয়া না গেলে বিপদ বাড়তে পারে।