
বোতলজাত ভোজ্যতেলের আমদানি বেশি হলেও বাজারে সংকট, পাচারের আশঙ্কা
দেশে বোতলজাত ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত আমদানি হলেও বাজারে সংকট অব্যাহত। পাচার ও কৃত্রিম সংকটের আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।
🔹 বিশেষ প্রতিনিধি:
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও দেশীয় বাজারে সংকট অব্যাহত রয়েছে। দেশের পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, এ বছর আমদানির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও বাজারে বোতলজাত ভোজ্যতেলের সংকট রয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর পেছনে কৃত্রিম সংকট ও পাচারের আশঙ্কা থাকতে পারে।
গতকাল রোববার বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) কার্যালয়ে ভোজ্যতেলের সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা নিয়ে এক বৈঠকে এ তথ্য উঠে আসে। বৈঠকে বলা হয়, দেশে ভোজ্যতেলের ঘাটতি নেই; বরং কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে।
আমদানি ও বাজার পরিস্থিতি
বিটিটিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভোজ্যতেলের আমদানি প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। আমদানি ঋণপত্রের (এলসি) সংখ্যাও বেড়েছে একই হারে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে বাজার তদারকি আরও জোরদার করা হবে, তবে কীভাবে তা করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, কিছু ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন যে ভোজ্যতেল বিক্রির ক্ষেত্রে অন্যান্য পণ্য কেনার শর্ত দেওয়া হচ্ছে, যা আইনবিরোধী। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
পাচারের আশঙ্কা
বৈঠকে আরও আলোচনা হয় যে, প্রতিবেশী দেশে ভোজ্যতেলের দাম বেশি হওয়ায় পাচারের ঝুঁকি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে এই অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য প্রতিরোধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পরিশোধন কোম্পানিগুলোর বক্তব্য
বিটিটিসি বৈঠকে বিভিন্ন পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জানান, তাঁরা আগের তুলনায় বেশি পরিমাণ তেল সরবরাহ করেছেন।
✅ সিটি গ্রুপ: জানুয়ারিতে ৫০,৭০০ টন ভোজ্যতেল সরবরাহ করেছে, যার মধ্যে ২২,২৪২ টন বোতলজাত।
✅ মেঘনা গ্রুপ: জানুয়ারিতে ৪৭,৬৬৮ টন ভোজ্যতেল সরবরাহ করেছে, যার মধ্যে ১৫,০০০ টন বোতলজাত।
✅ টি কে গ্রুপ: জানুয়ারিতে ১১,৮১০ টন বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করেছে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
রমজানে চাহিদা ও বাজার পরিস্থিতি
ব্যবসায়ীদের মতে, রমজানের জন্য প্রায় দেড় লাখ টন ভোজ্যতেল চট্টগ্রাম বন্দরে অপেক্ষমাণ। তবে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা থাকতে পারে।
বিটিটিসির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বার্ষিক ভোজ্যতেলের চাহিদা ২৩-২৪ লাখ টন। রমজান মাসে এই চাহিদা বেড়ে ১.৮-৩ লাখ টনে পৌঁছায়।
সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ
🔹 বাজার তদারকি সংস্থাগুলোকে কার্যকর ভূমিকা পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
🔹 ভোজ্যতেল সরবরাহ ও বিপণনের ক্ষেত্রে অনিয়ম প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
🔹 সীমান্ত এলাকায় পাচার রোধে প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
📌 সারসংক্ষেপ:
বাজারে পর্যাপ্ত আমদানি থাকা সত্ত্বেও ভোজ্যতেলের সংকট রয়ে গেছে। কৃত্রিম সংকট, বাজারে অনিয়ম ও পাচারের আশঙ্কা থাকায় ভোক্তারা চাপে পড়ছেন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তদারকি বাড়ানোর আশ্বাস দিলেও কার্যকর ব্যবস্থা কতটা নেওয়া হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে যাচ্ছে।