

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন—এমন গুঞ্জনের সত্যতা যাচাই করতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তার সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
বৈঠকের পর বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম জানান, “সারাদিন ধরে ইউনূস স্যারের পদত্যাগের গুঞ্জন শুনছিলাম। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করতেই তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”
নাহিদ ইসলাম জানান, অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্ট করে বলেছেন, “এই পরিস্থিতিতে আমি কাজ করতে পারছি না। যে আদর্শ, যে বিপ্লবের পর আমাকে এই দায়িত্বে আনা হয়েছিল, সেই জায়গা থেকে এখন অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাকে কার্যত জিম্মি করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার পক্ষে এই অবস্থায় দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। যদি রাজনৈতিক দলগুলো একসাথে মিলে কোনো সমাধানে না পৌঁছায়, তাহলে আমার থেকে যাওয়া অর্থহীন।”
নাহিদ ইসলাম অধ্যাপক ইউনূসকে অনুরোধ করেন যেন তিনি দায়িত্ব থেকে সরে না দাঁড়ান। তিনি বলেন, “এই সময়ে আপনার শক্ত থাকা প্রয়োজন। দেশের স্থিতিশীলতা এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার কথা ভেবে আপনাকে ঐক্য ধরে রাখতে হবে।”
তবে অধ্যাপক ইউনূস যে পদত্যাগের চিন্তা করছেন, তা নিশ্চিত করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “তিনি বলেছেন, পদত্যাগের বিষয়টি তিনি গুরুত্ব সহকারে ভাবছেন।”
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিএনপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানো নিয়ে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এই দাবি ওঠে।
বিএনপির এই দাবির বিপরীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির এক শীর্ষ নেতা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “সংস্কার সুপারিশ বাস্তবায়িত না হলে, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদকে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করে পদত্যাগে বাধ্য করা হতে পারে।”
এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝেই বৃহস্পতিবার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আগের বিভাজনমূলক বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব নিয়ে তৈরি অনিশ্চয়তা বাংলাদেশে একটি নতুন মোড়ের দিকে এগিয়ে চলেছে।