
সচিবালয়ে আগুনের কারণ দুর্বল বিদ্যুৎ সংযোগ: তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন
গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে দুর্বল বিদ্যুৎ সংযোগ ও বৈদ্যুতিক স্পার্ককে চিহ্নিত করেছে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। তদন্তে কোনো বিস্ফোরণ বা নাশকতার প্রমাণ মেলেনি বলে জানিয়েছে কমিটি।
আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া হয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং কমিটির অন্যান্য সদস্যরা ব্রিফিংয়ে অংশ নেন।
ব্রিফিংয়ে তদন্তের মূল তথ্যাদি:
নাসিমুল গনি জানান, তদন্ত কমিটির সদস্যরা একমত যে বৈদ্যুতিক লাইনের লুজ কানেকশনের কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত অন্য কোনো কারণ বা ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
কমিটির সদস্য বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী বলেন, আগুন রাত ১টা ৩২ থেকে ১টা ৩৯ মিনিটের মধ্যে ধীরে ধীরে সৃষ্টি হয়েছে। বৈদ্যুতিক লাইনে স্ফুলিঙ্গ পড়ার কারণে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে আগুন ধরে যায়। বিল্ডিংয়ের টানেলের প্রভাব ও বাতাসের গতি আগুনকে দুইদিকে ছড়িয়ে দেয়।
বিস্ফোরকের কোনো প্রমাণ মেলেনি:
সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রাসেল জানান, ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত নমুনাগুলো পরীক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর বিশেষায়িত ল্যাবে পাঠানো হয়। নমুনায় কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের চিহ্ন মেলেনি। একই তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশের সিআইডি ও ডগ স্কোয়াড।
ফায়ার সার্ভিসের পর্যবেক্ষণ:
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল জানান, ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সময় আগুনের তীব্রতা অনেক বেশি ছিল। বিল্ডিংয়ের ইন্টেরিয়র ডিজাইন, বৈদ্যুতিক তারের উপস্থিতি ও দাহ্য পদার্থ আগুন দ্রুত ছড়ানোর কারণ বলে উল্লেখ করা হয়। আগুন নেভানোর প্রচেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের টিম বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়, যেমন সিঁড়ি ও করিডরের টানেল গেট।
ক্ষয়ক্ষতি ও পরবর্তী পদক্ষেপ:
স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, ঘটনাস্থল ক্রাইম সিন হিসেবে সংরক্ষিত থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ হিসাব করা সম্ভব হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোকে তাদের ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য কিছু আলামত সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, ২৫ ডিসেম্বর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের ৬ থেকে ৯ তলা পর্যন্ত ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঘটনার পর সরকার দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে গুরুত্বপূর্ণ কোনো নথি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে জানানো হয়।
মুহাম্মদ ইউনূস এক ঘণ্টা সময় নিয়ে প্রতিবেদনটি শুনেছেন এবং চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।